হোম আমাদের সম্পর্কে জেলা বিচার বিভাগের ইতিহাস
নেত্রকোণা জেলা ও বিচার বিভাগের ইতিহাস
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ঘনিষ্ঠ সহচর শৈলজারঞ্জন মজুমদারের কাছে নেত্রকোণার নৈসর্গিক বিবরণ শুনে অভিভূত হয়ে লিখেছিলেন-
“বেড়ার ওপারে মৌসুমী ফুলে রঙের স্বপ্ন বোনা
চেয়ে চেয়ে দেখে জানালার নাম রেখেছি নেত্রকোণা।”
নেত্রকোণা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা। এটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত বরাবর দেশের উত্তর অংশে অবস্থিত। এই জেলার সদর শহর নেত্রকোণায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নেত্রকোণা। এটি কংশা, সোমেশ্বরী, ধলা, মগরা এবং তেওরখালী সহ অনেকগুলি নদীর আবাসস্থল। উত্তরে গারো পাহাড় এবং দক্ষিণে বেশ কয়েকটি পাহাড় রয়েছে এই জেলায়।
নেত্রকোণা একটি কৃষিপ্রধান জেলা। জেলায় উৎপাদিত প্রধান ফসল হল ধান, পাট, গম এবং শাকসবজি। এছাড়াও জেলাটিতে টেক্সটাইল, সিরামিক এবং খাদ্য পণ্যের উৎপাদন সহ বেশ কয়েকটি শিল্পের আবাসস্থল। জেলাটি প্রাচীন সোনারগাঁ শহরের ধ্বংসাবশেষ, সুফি সাধক হযরত শাহ জালালের সমাধি এবং নেত্রকোণা রাজবাড়ী সহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থানের আবাসস্থল।
“হাওর, বাওর, পাহাড়, নদী ও সমতল
নয়ন ভরিয়ে দেয় এই মাটি এই জল
লাখো লাখো মানেুষের স্বপ্নে বোনা
নৈসর্গিক শোভা আমাদের নেত্রকোণা।”
( মো: রফিকউজ্জামান)
নেত্রকোণা নামকরণ ও জেলার ইতিহাস
নেত্রকোণা জেলার নামকরণের ইতিহাস দীর্ঘ ও ঘূর্ণায়মান। এলাকাটি মূলত নাটোরকোনা নামে পরিচিত ছিল, যার বাংলা অর্থ "নাটোরের কোণ"। নাটোর রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা, এবং অষ্টাদশ শতকে জমিদাররা (ভূমিস্বামী) যারা এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করেছিল তারা সেখান থেকে এসেছিল। শেষ পর্যন্ত নাটোরকোনা নামটি নষ্ট হয়ে নেত্রকোণা হয়ে যায়।
১৮৮০ সালে ব্রিটিশ রাজ এলাকাটিকে একটি মহাকুমা (প্রশাসনিক অঞ্চল) হিসাবে অনুমোদন করে এবং এর নাম দেয় নেত্রকোণা মহাকুমা। ১৮৮২ সালের ৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে নেত্রকোণা নামটি গৃহীত হয়।
নেত্রকোণা নামটি এসেছে নাটোরকোনা নামক গ্রামের নাম থেকে। গ্রামটির অবস্থান নেত্রকোণা জেলা শহরের উত্তরে। ‘পাগলপন্থী বিদ্রোহ’ দমন করার উদ্দেশ্যে সপ্তদশ শতকের শেষভাগে ইংরেজ সরকার নাটেরকোনা নামক স্থানে প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিল যেখান থেকে সকল কার্যক্রম পরিচালিত হত। অবশ্য পরবর্তীতে নৌযোগাযোগের সুবিধার্থে ও পাগলপন্থীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নাটেরকোনা থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম কালীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ইংরেজ সরকারের প্রশাসনিক দলিল আদানপ্রদান চলতে থাকে নাটেরকোনা নামেই। ইংরেজদের মাধ্যমে ধ্বনি পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে নাটেরকোনা > নেতেরকোনা > নেতরকোনা > নেত্রকোণা রুপ লাভ করে।
নেত্রকোণার নামকরণ সম্পর্কে প্রচলিত আরেকটি জনশ্রুতি হল, নেত্রকোণা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মগড়া নদীর বাক চোখের বা নেত্রের কোনের মত বলে এই জায়গার নামকরণ হয়েছে নেত্রকোণা।জেলার সদর দপ্তর মগরা নদীর শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছিল বলেই নেত্রকোণা নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। বাংলায় "নেত্র" শব্দের অর্থ "চোখ" এবং "কোনা" শব্দের অর্থ "কোণ"। সুতরাং নেত্রকোণার আক্ষরিক অর্থ হল "চোখের কোণ"। মগরা নদী সোমেশ্বরী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে এমন একটি কৌশলগত পয়েন্টে জেলাটি অবস্থিত বলে এটিকে উল্লেখ করা হয়েছে।
নেত্রকোণা জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যঃ
ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নেত্রকোণা জেলার ইতিহাস প্রাচীন ঐতিহ্যে টই-টুম্বুর ও ঐতিহ্যের বিচিত্র ঘটনা সম্ভারে গর্বিত। বিভিন্ন তাত্ত্বিক পর্যালোচনায় স্পষ্টতঃ প্রমাণ করে যে সাগর বা সমুদ্রগর্ভ থেকে জেগে ওঠায় এ অঞ্চলটি মানব বসবাসের যোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। গারো পাহাড়ের পাদদেশ লেহন করে এঁকেবেঁকে কংস, সোমেশ্বরী, গণেশ্বরী, মহেশ্বরী, গোরাউৎরা নদীসহ অন্যান্য শাখা নদী নিয়ে বর্তমান নেত্রকোণা জেলার জলধারার উদ্ভব। এ জেলার প্রত্যেক নদীই জেলার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত। ফলে সমগ্র জেলার ভূমি উত্তরাংশে উঁচু এবং ক্রমে দক্ষিণ-পূর্বাংশে ঢালু।
খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে এ অঞ্চল গুপ্ত সম্রাটগণের অধীন ছিল। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, গুপ্তযুগে সমুদ্রগুপ্তের অধীনস্থ এ অঞ্চলসহ পশ্চিম ময়মনসিংহ কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুরাজ শশাংকের আমন্ত্রণে চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাঙ যখন কামরূপ অঞ্চলে আসেন, তখন পর্যন্ত নারায়ণ বংশীয় ব্রাহ্মণ কুমার ভাস্কর বর্মণ কর্তৃক কামরূপ রাজ্য পরিচালিত ছিল। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে পূর্ব ময়মনসিংহের উত্তরাংশে পাহার মুল্লুকে বৈশ্যগারো ও দুর্গাগারো তাদের মনগড়া রাজত্ব পরিচালনা করতো। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ দিকে জনৈক মুসলিম শাসক পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চল আক্রমণ করে অল্প কিছুদিনের জন্য মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। অতঃপর চতুর্দশ শতাব্দীতে জিতারা নামক জনৈক সন্ন্যাসী কর্তৃক কামরূপের তৎকালীন রাজধানী ভাটী অঞ্চল আক্রান্ত ও অধিকৃত হয়। সে সময় পর্যন্তও মুসলিম শাসক ও অধিবাসী স্থায়ীভাবে অত্রাঞ্চলে অবস্থান ও শাসন করতে পারেনি। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৩-১৫১৯) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মুসলিম রাজত্বের অন্তর্ভূক্ত হয়।
আলাউদ্দিন হোসেন শাহ’র পুত্র নসরৎ শাহ’র শাসনামলে (১৫১৯-১৫৩২) দু'একবার বিদ্রোহ সংঘটিত হলেও বিদ্রোহীরা সফল হয়নি। সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চলেই নসরৎ শাহ’র শাসন বলবৎ ছিল। নসরৎ শাহ’র পদচিহ্ন লোপ পেলেও তার অনেক স্মৃতিচিহ্ন কালের সাক্ষী হয়ে আছে। নসরৎ শাহ-র উত্তরাধিকারীরা (১৫৩৩-১৮৩৮) কিংবা তার পরবর্তী লক্ষ্মণাবতীর অন্য শাসকেরা ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে পারেনি। ময়মনসিংহের উত্তরাংশ কোচদের পুনরাধীন হয়ে পড়ে। বাকী অংশ দিল্লীর পাঠান সুলতান শেরশাহ-র (১৫৩৯-১৫৪৫) শাসনভুক্ত হয়েছিল। তৎপুত্র সেলিম শাহ’র শাসনের সময়টি (১৫৪৫-১৫৫৩) ছিল বিদ্রোহ ও অস্থিরতায় পূর্ণ। রাজধানী দিল্লী থেকে অনেক দূরে ও কেন্দ্রীয় রাজশক্তির দূর্বলতার সুযোগে প্রধান রাজস্ব সচিব দেওয়ান সুলায়মান খাঁ (যিনি পূর্বে কালিদাস গজদানী নামে পরিচিত ছিলেন) সম্রাটের বিরুদ্ধাচরণ করেন। এতে করে দেশী ও বিদেশী রাজ্যলিপ্সুরা এতদঞ্চল দখলের প্রয়াস পায়। এর মধ্যে ভাটী অঞ্চল (পূর্ব-উত্তরাংশ) সোলায়মান খাঁ-র দখলভুক্ত ছিল। কেন্দ্রীয় শাসকের প্রেরিত সৈন্যদের হাতে সোলায়মান খাঁ নিহত হলেও তার দু’পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ঈশা খাঁ খিজিরপুর থেকে ভাটী অঞ্চলে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ঈশা খাঁ’র মৃত্যুর পর তৎপুত্র মুসা খাঁ ও আফগান সেনা খাজা উসমান খাঁ কর্তৃক অত্রাঞ্চল শাসিত ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৫-১৬২৭) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মোঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
মোগল সেনাদের যুদ্ধ কৌশল জনিত কারণে অনেক দূর্গ প্রতিষ্ঠা হয়। এছাড়া পূর্ববর্তী শাসকদের তৈরী ভগ্নদুর্গও তারা সংস্কার সাধন করে ব্যবহার করেছিল। ওই সকল ঐতিহাসিক যুদ্ধদূর্গের ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রোয়াই বাড়ি দূর্গ যা পরবর্তীকালে ঈশা খাঁ’র পারিষদ মসজিদ জালাল এর আবাস বাটী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নেত্রকোণা সদরের অদূরে পুকুরিয়ার ধ্বংস প্রাপ্ত দূর্গসহ অনেক নিদর্শন মাটি চাপায় হারিয়ে গেছে। এরপরও কিছু নিদর্শন এখানকার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। পাশাপাশি সে সময়কার শাসকদের অনেক জনহিতকর কাজের সন্ধান পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখ্য খোঁজার দিঘী নামে পরিচিত জলাশয়গুলো। অনেকে মনে করেন খাজাদের জায়গীর ভূমিতে জনহিতকর কাজের অন্যতম পানীয় জল ব্যবস্থায় খাঁ দিঘীগুলো খনন করেছিলেন। তাই খোয়াজ খাঁ’র দিঘী থেকে খোজার দিঘী। এর ভিন্ন মতামতও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন খাজা উসমান খাঁ’র দিঘী থেকে খাজার দিঘী, সে থেকে খোজার দিঘী নামে পরিচিতি পায়। তৎকালীন সুসঙ্গ, নাসিরূজিয়াল, মৈমনসিংহ, সিংধা ও খালিয়াজুরী পরগণার ভূমি নিয়ে বর্তমান নেত্রকোণা জেলার অবস্থান।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ খিস্টাব্দে নেত্রকোণা মহকুমা সৃষ্টি হয়। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি থেকে নেত্রকোণা মহকুমার কার্য শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে এ জেলায় কৃষক বিদ্রোহ, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন ও তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯৪৫ সালে জেলা সদরের নাগড়ায় তিনদিনব্যাপী সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তান আমলে নেত্রকোণা মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার জন্য গণদাবী ওঠে। সে দাবী পূরণের লক্ষ্যে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সরকার কেন্দুয়ায় জেলা সদর স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করেছিল। কিন্তু সরকারের সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি নেত্রকোণা মহকুমাকে জেলা ঘোষণা করা হয়। (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন নম্বর-এস-আর, ও ১৭-এল/৮৪/এম,ই,আর(জ,এ-২)/২৬৪/৮৩-৩০)। একই খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে নব প্রতিষ্ঠিত জেলার কার্যক্রম শুরু হয়।
নেত্রকোণার স্বাধীনচেতা জনগোষ্ঠী ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের সারাংশ শুনেই অনুধাবন করতে পেরেছিল তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে যেতে হবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের জন্য নেত্রকোণাবাসীর প্রস্তুতি গ্রহণে বেশি সময় ব্যয় হয়নি। ৭ মার্চ এর পর থেকেই নেত্রকোণার প্রত্যেক থানা শহরগুলোতে যুদ্ধে যাবার জন্য যুব সমাজ উদগ্রীব হয়ে ওঠে। প্রতিদিন থানা পর্যায়ে গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ সশস্ত্র মিছিল করে আসতে থাকে। নেত্রকোণা শহরসহ থানা শহরগুলোর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান মানুষগুলোও নীতি নির্ধারণের কাজ শুরু করে দেন। নেত্রকোণার রণাঙ্গনগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় তৎকালীন নেত্রকোণা মহকুমার ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেছেন। নেত্রকোণা মহকুমার মুক্তিযোদ্ধাগণ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুক্তিযোদ্ধা নেত্রকোণার বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন এবং অনেকে শহীদ হয়েছেন।
নেত্রকোণা জেলা ও দায়রা জজ আদালতঃ
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, নেত্রকোণা ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম জেলা জজ ছিলেন মোঃ আব্দুল জলিল যিনি ০১/০৯/১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে অত্রাদালতে যোগদান করেন। শুরুতে নেত্রকোণা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হত নেত্রকোণার মোক্তারপাড়া এলাকায় অবস্থিত পুরাতন কোর্ট ভবনে। বিচারপ্রার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে উক্ত কোর্টভবনের নিকটে একটি পুরাতন রেল স্টেশন আছে যা কোর্ট স্টেশন নামে পরিচিত। বর্তমানে নেত্রকোণা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কার্যক্রম নেত্রকোণা শহরের জয়নগর এলাকায় প্রতিষ্ঠিত নতুন ভবনে ১০/১১/১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ হতে পরিচালিত হচ্ছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, নেত্রকোণাঃ
নেত্রকোণার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২৭/০৩/২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১২/০৭/২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর প্রথম বিচারক হিসেবে জনাব ডঃ এ কে এম আবুল কাশেম ১২/০৭/২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে যোগদান করেন।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, নেত্রকোণাঃ
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর ০১ লা নভেম্বর ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নেত্রকোণা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে নেত্রকোণার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন জনাব মোঃ গোলাম কিবরিয়া। বর্তমানে মোট ১২ টি বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এর পদ রয়েছে। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নেত্রকোণার নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ আদালতেই এই আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, নেত্রকোণাঃ
প্রায় ২৪,০০০ মামলা নিয়ে ১৪/০৮/২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল নেত্রকোণা প্রতিষ্ঠিত হলেও তখন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক তার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দ্বায়িত্ব পালন করতেন। পরবর্তীতে ০৯/০২/২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোণা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারক হিসেবে জনাব কামাল হোসেন দায়িত্ব পালন করেন।
চৌকি আদালতঃ
নেত্রকোণা জেলার সব বিচারপ্রার্থীরা যাতে সমান সেবা পেতে পারেন এই উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ আমলেই ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোণার দূর্গাপুর উপজেলায় একটি চৌকি আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইতিহাস সম্মৃদ্ধ এই দূর্গাপুর চৌকি আদালতের প্রথম বিচারক ছিলেন জনাব নগেশ চক্রবর্তী যিনি সিনিয়র মুন্সেফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সেখানে দূর্গাপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও কলমাকান্দা সহকারী জজ আদালত এবং দুর্গাপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নামীয় মোট ০৩ টি চৌকি আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
নেত্রকোণা জেলা আইনজীবি সমিতিঃ
নেত্রকোণা জেলা আইনজীবি সমিতি একটি ঐতিহ্যবাহী এবং সম্মৃদ্ধ বার। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোণা মহকুমা আইনজীবি সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নেত্রকোণা জেলা আইনজীবি সমিতির পথচলা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোণা জেলা আইনজীবি সমিতি আত্মপ্রকাশ করে। জেলা আইনজীবি সমিতির প্রথম সভাপতি ছিলেন জনাব এ, কে, এম ফজলুল কাদের এবং প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এ, কে, এম মোজাম্মেল হক। নেত্রকোণা জেলা আইনজীবি সমিতির কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে একটি টিনশেড ভবনে শুরু হলেও বর্তমানে একটি অত্যাধুনিক ভবনে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।